নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব
কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে কামার শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করলেও তাদের তৈরী করা সরঞ্জাম বিক্রিতে এখন অনেকটা ভাটা পড়ারর মত। উচ্চ মূল্যে কয়লা, লোহা ও ষ্টীলের মালামাল কিনে প্রত্যাশা নিয়ে হাটে-বাজারে ক্রেতা না থাকায় ওইসব সরঞ্জাম বিক্রি কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকৃত পূঁজি উঠানো নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এখনকার কামার শিল্পীরা। কামার দোকানে এখন আর নাই সেই আগের মত মানুষের পদচারনা।
জানা যায়, কোরবানীর পশু জবাই ও মাংস কাটতে দা, বটি, ছুরি ও ধামা তৈরীসহ ওইসব পুরনো সরঞ্জাম শান দিতে ইতিমধ্যেই ব্যাস্ত সময় পার করছেন ভৈরবের কামার শিল্পীরা। যেন ঢুং ঢাং শব্দে মুখোর কামার দোকানের আশেপাশের এলাকা। এ বিশাল শিল্পের সঙ্গে জড়িত কামার সম্প্রদায়ের লোকজন লৌহ ও ষ্টীলসহ বিভিন্ন ধাতবদ্রব্য দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় ওইসব দা, বটি, ছুরি ও ধামা তৈরীর মাধ্যমে পূর্ব পুরুষদের এ পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছে কোন রকম।
অত্র এলাকার কোরবানির গোবাদি পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য দা, বটি, ছুরি ও ধামা তৈরী করতে কয়লার আগুনে লাল করে টক-টকে হয়ে উঠা লোহা-ষ্টীলের হাতুড়ী দিয়ে দুই দিক থেকে জোরে জোরে পেটাতে হয়। এতে অনেক শক্তির প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি আঙ্গুল দিয়ে আইতনার রশি টেনে কয়লার আগুনে বাতাস দিতে হয় পাশের আরেকজনকে।
কোরবানীকে সামনে রেখে চাহিদা মোতাবেক কোরবানীর ঈদের জন্য তৈরী দা, বটি, ছুরি ও ধামাসহ বিভিন্ন সামগ্রী বেচাকেনার জন্য মজুত করলেও অন্য সময় হাটে-বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই এ শিল্পে নানা অস্থিরতা ও সংকটের মধ্যে রয়েছে কামার শিল্পিরা।
ভৈরবের বিভিন্ন কামার শিল্পিরা জানান, কোরবানীর ঈদ আসলে এ পেশার মানুষদের একটু ব্যস্ততা ও কদর বাড়ে। অন্য সময় অলস ভাবে সময় কাটাতে হয়। এবার ঈদে বটি, দা, ছোট-বড় ছুরি ও ধামা তৈরীতে ৫ থেকে ১০০০ টাকা করে মুজুরী নেয়া হচ্ছে। আর তৈরী করা ওইসব সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকায়। গরু কাটার ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়। তবে গরু কাটার ছোট ছুরির চাহিদা একটু বেশী রয়েছে। ওইসব তৈরী করতে যেসব মালামাল প্রয়োজন তা বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়ায় তৈরীকৃত ওইসব মালামাল বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। আগের মত এখন আর নতুন করে মানুষ ওইসব মালামাল কিনতে চায়না। ঘরে থাকা পুরানো দা, বটি, ছুরি ও ধামা গুলো পুনরায় শান দিয়ে ধারালো করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যারা কামারের কাজ করি তারা শুধুমাত্র কোরবান ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের একটু চোখে পড়ি, আর পুরোবছর জুড়ে আমরা এবং আমাদের এ শিল্প থাকে অবহেলিত। এছাড়া বাজারে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে মেশিনের তৈরী জিনিসের দিকে ঝুকছে।
ভৈরব রানীর বাজার এলাকার শ্যামল কর্মকার জানান, কোরবানি ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। গত বছরের তুলনায় এই বছরে অনেকটা কোরবানির গবাদিপশু জবাই করার সরঞ্জামের কাজ কমে গেছে। তাছাড়া বন্যার কারণে অনেকেই কোরবাণী দেওয়ার মত সামর্থ্য না থাকায় আমাদেরও কাজও অনেকটা কম। যদি দা বটি বা চুরি চাপাতির কাজ আসে তাহলে আমরা করি।
ঘোরাকান্দা এলাকার বিকাশ কর্মকার জানান, আগের মত এখন আর কামারের কোরবানির সরঞ্জাম মেরামতের কাজ নাই। যদিও আসে অনেকে ডাকাডাকি করে,পরে দেখা যায় খোড়াকির টাকাও হয় না। তারা আরও জানায় তাদের তৈরি দা, বটি, চাকুসহ অন্যান্য জিনিস মজবুত হওয়া হলেও চাকচিক্যের কারণে ক্রেতারা মেশিনের তৈরি ছুরি-চাকুর দিকে ঝুঁকছে ক্রেতারা। আর ছুরি-চাকু তৈরির কাঁচামাল লোহা আর কয়লার দাম বছর বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে করে তৈরি জিনিসের দাম পড়ছে বেশি। আর এ বাড়তি দাম দিয়ে কর্মকারদের কাছ থেকে ছুরি-চাকু কিনতে চান না ক্রেতারা।
চন্ডিবের এলাকার রমেশ কর্মকার জানান, আমরা মোটামুটি ভাবে কাজ করছি। অত্র এলাকাসহ আশে পাশের অনেকে জালাই করা, পানি দেওয়া, শান দেওয়াসহ অনেক কাজ করছি। তাই আমরা কিছুটা বেশতি রুজির আশাবাদি।
আবার দেখা যাচ্ছে কোরবানির পশুর মাংস কাটার আর একটি বিশেষ অনুসঙ্গ কাঠের গুঁড়ি। তাদের বিক্রিতে এখন তেমন বেচাঁকেনা নাই।
ভৈরব কাঠবাজারের গুড়ি ব্যবসায়ী মো:বাচ্ছু মিয়া জানান প্রতি কোরবানির ঈদের বছরই গুড়ি বেচাকেনা করি। তবে হাটবাজারে মুটামুটি বেচা হয়ছে আর সামনে যা দিন আছে ভালই বেচাকেনা হবে বলে জানান গুড়ি ব্যবসায়ী।
একটি দৃশ্যপট মিডিয়া লিঃ
Leave a Reply