ভৈরব প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে রিমা প্রামাণিক (১৯) নামে এক নার্সের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। (১১ জুলাই) সোমবার সকালে ভৈরবের ইউনাইটেড হাসপাতাল অ্যান্ড অর্থোপেডিক্স সেন্টার থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত রিমা পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দি গ্রামের সেন্টু প্রামাণিকের মেয়ে। রিমা ইউনাইটেড হাসপাতাল অ্যান্ড অর্থোপেডিক্স সেন্টার নামের বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ঘটনার পর সোমবার এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু দায়ের হলেও আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনায় নিহত রিমার বাবা সেন্টু চন্দ্র প্রমানিক বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামী করে ভৈরব থানায় একটি মামলা করে। 

এদের মধ্য আসামীরা হচ্ছেন হাসপাতালের এমডি হানিফুর রহমান সুমন (৩৫) ও নার্স লিজা (২৪) সহ অজ্ঞাত ৩/৪ জন। তবে মামলা দায়েরের আগে মঙ্গলবার ভোরে হাসপাতালের এমডি হানিফুর রহমান সুমনকে পুলিশ বাসা থেকে আটক করে।

পুলিশ বলেছিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় কিন্ত দুপুরে মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, নার্স রিমা প্রমানিক দুই বছর যাবত ওই হাসপাতালে চাকুরীয়ত্ব ছিল। ঈদের তিনদিন আগে সে ছুটি নিয়ে তার নিজ বাড়ি রায়পুরার পিরিজকান্দি গ্রামে চলে যায়। গত শনিবার ঈদের আগেরদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরী ফোন দিয়ে ঈদের দিন ডিউটি করতে তাকে হাসপাতালে আসতে বলা হয়। ঈদেরদিন ডিউটি করে সে পাশের বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় নার্সদের থাকার রুমে সে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে।

এজাহারে আরও বলা হয় রবিবার ঈদের রাতে কোন এক সময় হাসপাতালের কয়েকজন মিলে তাকে গলাটিপে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করে। পরে ভোরে নিহতের বাবাকে জানানো হয় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার সকালে পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

নিহত নার্স রিমার বাবা সেন্টু চন্দ্র প্রমানিক বলেন, আমার মেয়ে ঈদের আগে ছুটিতে বাড়ী আসে। গত শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ফোন দিয়ে হাসপাতালে ডিউটি করতে আসতে বলে। ঈদের দিন আমার মেয়ে ডিউটি করলেও কিন্ত রাত সাড়ে ৪ টায় ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে আমরা সোমবার ভোরে হাসপাতালে এসে দেখি রিমার মরদেহ হাসপাতালের নিচের কক্ষে শোয়ানো রয়েছে। সে আত্মহত্যা করলে তার ৫ তলার শয়ন কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকত। তার লাশ রুম থেকে বের করা হলো কেন, তার প্রশ্ন। 

পুলিশের সুরুতহাল রিপোর্টে আমার মেয়ের যৌনাঙ্গে রক্তের দাগ রয়েছে বলা হয়। তারা আমার মেয়েকে ধর্ষন করে গলাটিপে হত্যা করে। আমি গতকাল না বুঝে অপমৃত্যু মামলা করেছিলাম। আজ মঙ্গলবার হত্যা মামলা করেছি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, ঘটনাটি আত্মহত্যা না হত্যা তা তদন্তের পর এবং ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে বলা যাবে। ঘটনায় নিহতের বাবা আজ থানায় দুজনকে আসামী করে একটি মামলা করে। আর হাসপাতালের এমডি সুমনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।