নাজির আহমেদ আল-আমিন
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার সময় ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কারণে অতিষ্ঠ হচ্ছেন হাসপাতালে আসা রোগীরা। তাঁরা নিয়মনীতি না মেনে যখন-তখন ঢুকে পড়ছেন বহির্বিভাগে। চিকিৎসকদের দিচ্ছেন উপঢৌকন (উপহার সামগ্রী)। এ ছাড়া রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন। এতে বিরক্ত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা বলছেন তাদের ডাক্তার ভিজিটের সময় হচ্ছে সপ্তাহে দুইদিন দুপুর ১টার পরে।
অনেক রোগীরা জানায় ,ব্যক্তিগত চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রের ছবি আরেকজনকে দেওয়া ঠিক নয়। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় চিকিৎসকেরাও কেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন? এতে আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্য হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন রোগী নিয়মানুযায়ী টিকিট কেটে তাঁদের কাছে চিকিৎসা নিতে যান। এ সময় ওষুধ কোম্পানির লোকদের ভিড় ঠেলে চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করেন রোগীরা। রোগীর আশেপাশে কোম্পানির লোকেরা ওষুধের বিভিন্ন নামসংবলিত প্যাড ও উপঢৌকন (উপহার সামগ্রী) নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন। চিকিৎসকও এর ফাঁকেই রোগীদের সমস্যার কথা জানতে চাচ্ছেন। পুরুষ রোগীরা অনায়াসে বলতে পারলেও নারী রোগীরা বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আকলিমা জানান, তাঁর একটু ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসকের কক্ষে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকদের উপস্থিতির কারণে তিনি তাঁর সমস্যার কথা সেভাবে বলতে পারেননি। স্বাভাবিক সমস্যার কথা বলেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাইরে বের হতেই কোম্পানির লোকেরা তাঁর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা শুরু করেন।
চিকিৎসা নিতে আসা আলম, আলী আকবর ও রহিমা বেগমসহ অনেকে বলেন, কোম্পানির লোকদের চিকিৎসকেরা সুযোগ দেন, তাই তাঁরা এভাবে চিকিৎসাসেবার কক্ষে থাকতে পারেন। চিকিৎসা নিতে এসে যদি আবার তা ব্যবসায় পরিণত হয়, এটা বেশ কষ্টের। চিকিৎসকেরাও ওষুধ লিখছেন কোম্পানির লোকদের মুখ দেখে দেখে।
বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, হাসপাতালে আসার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তাই তাঁরা সুযোগ পেলেই চিকিৎসকদের কক্ষ ভিজিট করেন। এখানে কারও ভোগান্তি হওয়ার কথা নয়।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ কিশোর কুমার ধর জানায়, প্রায়ই এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আমরা আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করেছি। এবং ফারিয়ার ভৈরব এ-র সভাপতি আল-আতিক পায়েলকে বিষয়টি জানিয়েছি। কোম্পানীর প্রতিনিধিরা প্রতিদিন আসতে পারবে না। যদি তারা আসে তাহলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের (ফারিয়া) ভৈরব এ-র সভাপতি আল-আতিক পায়েল বলেন, ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ডাক্তার ভিজিট করা উচিত,কারণ কোম্পানীর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তথ্য ডাক্তারদের দিতে হয় । এছাড়া আমরা যারা কাছ করি তাদের কোম্পানীর কোন প্রোডাক্টের নাম লিখছে কিনা তা দেখার জন্য। আর মুলত প্রেসক্রিপশন দেখার জন্য আমাদের হাতে ধরার কোন নিয়ম নাই। যখন কোন রোগী বা কেমিস্ট প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসীতে যাবে তখন, যাতে করে কোন রকম অভিযোগ না আসে সেভাবে তারা ভিজিট করবে। আর যদি কোন প্রতিনিধি প্রেসক্রিপশন সার্ভে আইন অমান্য করে তাহলে তাদেরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদেরকে আমি যোগদানের পরপরই তাদেরকে নোটিশ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সপ্তাহে দুই দিন রবিবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার পরে তারা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ডাক্তার ভিজিট করতে পারবে। এছাড়া তারা এই দুইদিন ব্যতিত কেউ হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যদি তারা আমাদের নিয়মের বাহিরে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একটি দৃশ্যপট মিডিয়া লিঃ
Leave a Reply