দিবস উপলক্ষে ব্যস্ততা বেড়েছ ফুল ব্যবসায়ীদের।
নাজির আহমেদ আল-আমিন
ফেব্রুয়ারি মাস ভালোবাসার মাস শ্রদ্ধাঞ্জলীর মাস। গ্রাম থেকে শহরতলীর বাতাসে মিষ্টি ভালোলাগার আনাগোনা শুরু হয়েছে। আর ফুলের বাজারগুলো প্রেমিক-প্রেমিকাদের দখলে চলে গেছে।
প্রতিবছর দেশে ফুলের চাহিদা বাড়ে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ব্যাপক চাহিদা থাকে বিভিন্ন উৎসবের কারণে। বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা থাকে আকাশচুম্বী, ফুলের ভরা মৌসুমে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিন দিবসের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।
এ সময়ে সারা দেশে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। সেই সুবাধে কিশোরগঞ্জের ভৈরবেও বিভিন্ন ফুলের দোকান ও নার্সারীতে সাজিয়ে রেখেছে বাহারি ফুলের সাজঁ। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর মোড়ে সাজিয়ে বসেছে বাহারি ফুলের সাজঘর। এ যেন ঢাকার বাহিরে আরেকটি শাহবাগ মোড়।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ফুলের দোকান গুলোতে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। এছাড়াও বছরজুড়ে বিভিন্ন উৎসব বিশেষ করে জন্মদিন, বিয়ে, কুলখানি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা বছর জুড়েই ফুল বাণিজ্য চলে। ব্যবসায়ীরা জানান প্রতি বছর গড়ে ২০ শতাংশ হারে দেশে ফুল উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া দেশে অনেক ফুল চাষ করা যায় তবে অর্কিড ফুলসহ বেশ কিছু ফুল দেশে চাষ হচ্ছে না ফলে এ ধরণের কয়েক ধরনের ফুল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
ভৈরব উপজেলার এলাকার কমলপুর গাছতলা ঘাট গিয়ে দেখা যায়, মাঠভর্তি বাগানে শোভা পাচ্ছে টিউলিপ, গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্র মল্লিকা, রজনীগন্ধা, জিপসিসহ নানা জাতের ফুল। সেই ফুলের বাগানে পরিচর্যা করছেন চাষীরা।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কের মুক্তিযোদ্ধা চত্বর মোড়ে,কমলপুর নিউটাউন এলাকায়,ও বাসস্ট্যান্ডের কলেজ রোড এলাকায় বিভিন্ন ফুলের দোকানে সাজিয়ে রয়েছে বাহারী রঙ্গের ফুল।
ফুলচাষি আব্দুল হাই বলেন, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের চাহিদা থাকে বেশি। সেই চাহিদা মেটাতে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি। বাজার ধরার জন্য ফুল গাছের পরিচর্যা করছি। ফুলটা যেন ভালো থাকে এ জন্য কাজ করছি।
ফুল ব্যবসায়ী শুভ জানান, সারা বছরই তারা ফুল বিক্রি করে থাকেন। তবে প্রতি বছরে বিশেষ , বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও থাকে ভালো।
ভৈরবে ফুলের দোকানগুলোতে, লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ২০-৪০ টাকা, গোলাপ কাগজে মোড়াতে লাগছে ২০-৩০ টাকা, অন্য রঙের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, রঙিন গ্লাডিওলাস ৩০-৫০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ২০-৩০ টাকা, গাঁদা ৫০ টাকা ১শ, ফুলের তোড়া নরমাল সর্বনিম্ন সাড়ে ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, জারবেরা ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। এর মধ্যে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে লাল গোলাপ ও জারবেরা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ফুল কিনতে আসা ফুলের ক্রেতারা জানান, এবার ফুলের দাম কিছুটা বেশী। কিন্তু ভালোবাসা দিবসের অন্যতম আকর্ষণ ফুল। প্রিয়জনের জন্য এইসময় ফুল ছাড়া অন্য কোনো উপহার ভাবতে পারি না। তাই দাম হলেও ফুলই নিতে হবে বলে জানান ক্রেতারা।
শাহরিন ফ্লাওয়ার গার্ডের এর পরিচালক ফাহিম মিয়া জানায়, আমাদের ফুল ব্যবসায়ীদের সারা বছরের আয়ের একটা বৃহৎ অংশ ফেব্রুয়ারী মাস থেকে আসে। এইবছর আমাদের ব্যবসাও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আছে। বছরের অন্য সময় এত পরিমাণ ফুল বিক্রি হয় না। তাই ভরা মৌসুমে যা আয় হবে তা দিয়েই সারা বছর চলা যাবে। খরচ বাদ দিয়ে এর তিন ভাগের একভাগ মুনাফা থাকবে বলেও জানান এই ফুল ব্যবসায়ী।
ফুল বেশী দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, নতুন বছরে তুলনামূলক ভাবে উৎপাদনও কিছুটা কম। আবার বিদেশি ফুল আমদানিতে খরচ বেশী হচ্ছে। যেকারণে ফুলের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে। তবে ফেব্রুয়ারীর বিশেষ দিবসগুলোতে ক্রেতারাও এই দাম নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন না।
এদিকে ব্যবসায়ীরা হুমকির মুখে পড়েছেন বিভিন্ন কোম্পানি গড়ে উঠা কৃত্রিম ফুলের ব্যবহার নিয়ে। তারা বিভিন্ন হোটেল রেষ্টুরেন্টসহ বড় বড় অনুষ্ঠান সাজানোর কন্ট্রাক নিয়ে কৃত্রিম ফুল দিয়ে সাজাচ্ছেন। এতে করে ফুলচাষীদের ব্যবসা কিছুটা ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। তারা কৃত্রিম ফুল আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
একটি দৃশ্যপট মিডিয়া লিঃ
Leave a Reply